স্মার্ট ফোন বাচ্চাদের জন্য কতটা ক্ষতিকারক|
স্মার্ট ফোন বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিকারক। এই সমস্ত ক্ষতিকারক দিক গুলি বর্ণনা করতে গিয়ে, আমরা প্রথমে যেটা দেখতে পায় সেটি হল-সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুগের ও মানুষের চিন্তা ধারার পরিবর্তন। বর্তমান যুগে আমরা দেখে আসছি যে, অতীতে যে পরিমাণ শিশুর শৈশব কালকে গুরুত্ব দেয়া হতো, সেই রকম শিশুর শৈশব কাল বর্তমানে আধুনিক মানুষের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। একটু সুবিধা মূলক ভাবে আলোচনা করলে আমরা বলতে পারি বর্তমান যুগে স্মার্টফোন ব্যবহারের সাথে সাথে বড়দের ব্যাস্ততা যেরকম বেড়ে গিয়েছে, ঠিক তেমনি ছোটরা যাতে তাদের কাজে অথবা ইচ্ছা মূলক সময় অপচয় যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তার জন্য অভিভাবকরা শিশুদের হাতের নির্দ্বিধায় স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন।
দ্বাদশ শতকের শুরুতে ও দশ কুড়ি বছর পূর্বে যেসকল ব্যক্তিবর্গ জন্ম লাভ করেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই এই সমস্যার অন্তর্ভুক্ত।
জীবনের গতিধারায় মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে তারা তাদের শিশুদের দিকে ঠিকভাবে খেয়াল করতে পারে না। যদিও দেখা গিয়েছে যে কিছু কিছু অভিভাবকগণ সম্পূর্ণ শিশুদের দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু বর্তমান যুগে স্মার্টফোনের ব্যবহার শিশুটিকে তার ব্যবহার করায় বাধ্য করেছে। কিছু সংখ্যক শিশুকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না দেওয়া হলে, তাদের নিকটে অবস্থিত শিশুদের স্মার্টফোনের ব্যবহার,অন্য শিশুদের আকর্ষণ করে। এর ফলে তাদের মধ্যে সেটা পেয়ে ওঠার জেদ চেপে যায়। ফলস্বরূপ কিছুদিন যেতে না যেতেই, যে শিশুটিকে ভালভাবে নজর রাখা হয়েছিল সেই শিশুটিকে ও অভিভাবক স্মার্টফোন দিতে বাধ্য হয়ে যায়। সমাজের এই মূর্খতা যুক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাদের সাথে সাথে, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী পরিবারের আশা-ভরসা নষ্ট হয়ে যায়।
এর ফলে শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ওপর একটি বিপরীতমুখী পরিস্থিতি সূত্রপাত ঘটে।
এখন শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
১. পড়াশোনার প্রতি অনীহা:-
বর্তমানে শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহারের এতটাই নেশা লাগিয়ে নিয়েছে যে, তাদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের তাগিদ মনের মধ্যে লেগেই থাকে। এককথায় বলা যায় তারা ইস্কুলে পড়াশোনা চলাকালীন পড়াশোনায় মনোযোগ না দিয়ে, কবে তারা আবার মোবাইল হাতে পাবে তার দিকে মনোযোগ দিয়ে দেয়। এর ফলস্বরূপ মনুষ্য জীবনের পড়াশোনা যেটি মূল ভিত অর্থাৎ শিশুবেলার পড়াশোনা যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের ভবিষ্যতের উজ্জ্বল দিক ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা আমরা দেখতে পায়,স্মার্টফোন ব্যবহারের তাগিদ এতটাই শিশুদের গ্রাস করে ফেলে যে, তারা স্মার্টফোন ব্যবহারের নেশায় অনেকে পড়াশুনায় ইতি টেনে ফেলেছে।
২. খাবারে অনীহা:-
আমরা সকলেই জানি যে বেঁচে থাকতে গেলে খাবার কতটা জরুরি। স্মার্টফোন ব্যবহারের তাগিদে শিশুদের মধ্যে খাবারের অনীহা সৃষ্টি হয় কারণ তারা একনাগাড়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে থাকায় তার মাঝে যাতে কোন ইতি না ঘটে, সেই কারণে তারা খাবার না খেয়ে অনবরত স্মার্টফোন ব্যবহার করে যায়। ফলস্বরূপ শিশুদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ও পুষ্টিকর খাবার না পৌঁছানোয় তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের মূল শারীরিক গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে না। এর ফলে অনেক শিশু বেড়ে ওঠার সাথে সাথে কোন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। তবে বেশিরভাগ শিশু সমস্যার সম্মুখীন হয় শৈশবকাল পেরিয়ে আসার পর।
৩. চোখের সমস্যা:-
মানবজীবনের গতিধারায় চোখ হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার মাধ্যমে মানুষ অধিকাংশ কাজ সহজ সরলভাবে করতে পারে। কিন্তু যখন শিশু অবস্থায় শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে থাকে তখন তাদের চোখ স্মার্টফোন থেকে বিকরিত আলোক রশ্মি থেকে বাচার জন্য যে পূর্ণরূপ চোখের প্রয়োজন, সেটি তাদের পরিপূর্ণ না থাকার জন্য তাদের দৃষ্টিশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটায় এবং ধীরে ধীরে তাদের চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যুক্ত হতে থাকে। এমনকি কিছু কিছু শেষে অতিরিক্ত পরিমাণ ও বেশি আলো যুক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার ফলে অনেকটা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও ফেলেছে।
৩. মস্তিষ্কের সমস্যা:-
শিশুদের মস্তিষ্ক পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশে পরিপূর্ণতা পায়। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে শিশুদের যেমন পড়াশোনা দরকার ঠিক তেমনি বাইরের জগতকে জানার দরকার থাকে। স্মার্টফোন ব্যবহারের তাগিদে বর্তমান যুগে শিশুরা অধিকাংশ সময় বাড়ির ভিতরে সময় কাটিয়ে দেয়। তাই তাদের মস্তিষ্ক বাহ্যিক জগতের সুস্থ পরিবেশ না পেয়ে তাদের স্মৃতিশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
৪. জেদ বাড়তে থাকে:-
অতীত যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুবকদের শিশুদের মধ্যে জেদ থাকা স্বাভাবিক। তবে জেদের ও একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে, যেটি স্মার্ট ফোন ব্যবহারের জন্য অনেকটা বেড়ে যায়। এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলা যায় যে যখন কোন শিশু কোন কারণে জের ধরে সেটি তার সামগ্রিক চাহিদা হতে পারে অথবা দৈনিক চাহিদাও হতে পারে। যখন একটি শিশু দৈনিক চাহিদার যেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন তার মধ্যে সময়ের সাথে সাথে জেদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। অনুরূপভাবে একটি শিশু যখন দৈনিক জের ধরে এ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে থাকে, ঠিক তেমনি তার মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয়ে যায় যে, জেদ ধরলে যেকোনো জিনিস সহজে পাওয়া যায়। এর ফলস্বরূপ যথেষ্ট পরিমাণে ভুগতে হয় অভিভাবকদের। কারণ শিশুরা কখনোই পরিবারের পরিস্থিতি বুঝে উঠার ক্ষমতা রাখেনা।
এছাড়াও আরো অনেক সমস্যা যেমন:-
৫. ঘুমের সমস্যা বা ঘুমের মাঝে বারবার ব্যাঘাত ঘটা।
৬. মস্তিষ্কের মধ্যে টিউমার সৃষ্টি।
৭. শারীরিক কার্যক্ষমতা হ্রাস।
৮. গলায় ব্যথা।
৯. সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে না জেনেবুঝে অন্যকে বিচার করা।
১০. ভাষার সারমর্ম না জেনে অর্থাৎ বয়সের বড় ব্যাক্তিদের অশ্লীলভাবে গাল দেওয়া ও অসম্মান করা।
এই সমস্ত বাস্তবভিত্তিক ও ভবিষ্যতের অনুমানভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে আমরা মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিক দেখতে পেলেও, অনেক সময় স্মার্ট ফোন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত থাকে। কিছু কিছু দুস্থ পরিবার যাদের মধ্যে আগে থেকে শিক্ষার অভাব চলতে থাকে কিন্তু শিশুটি তার জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে যখন মোবাইলটিকে ভাল কাজে ব্যবহার করতে শিখে যায় তখন তার পরিবারের সম্পূর্ণভাবে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে এবং এই শিশুটির মাধ্যমে পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জ্ঞানভান্ডারে জগতে স্থান পেয়ে যায়। স্মার্ট ফোন ব্যবহারের দিক শিশুদের ক্ষেত্রে যেমন ক্ষতিকর, তেমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজেরও হয়ে থাকে। তবে শৈশবকাল পেরিয়ে কিশোর বয়সে সেই শিশুগুলি ঠিকভাবে শাসিত হলে মোবাইল ফোন এর মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তোলে।